নারীবাদ

নারীবাদ নিচ্ছেন , এর ফল নিতে প্রস্তুত আছেন তো?- (পর্বঃ০৬/২)

|| পর্ন ইন্ডাস্ট্রি ও নারীবাদ ||
(জ্ঞাতব্যঃ এই লেখার ভাষা ও বিষয়বস্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল।)

নারীবাদ ও পর্নগ্রাফির সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেককেই এরকম সরলীকরণ করে ফেলতে দেখা যায়, “নারীবাদ তৈরী করা হয়েছিলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রীর অভিনেত্রীর যোগান দেওয়ার জন্য।”
আমি একমত নই। কারণ শুধুমাত্র পর্ন ইন্ডাস্ট্রীর অভিনেত্রীর যোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নারীবাদ তৈরী করা হয়নি, আরো কারণ ছিলো। অপরদিকে, নারীবাদের মাধ্যমে কেবল অভিনেত্রীর যোগানই দেওয়া হয়নি, মার্কেটও তৈরী করা হয়েছে। অর্থাৎ, ডিমান্ড ও সাপ্লাই দুটোই তৈরী করে নেওয়া হয়েছে নারীবাদের মাধ্যমে। কিভাবে? সেটা নিয়েই বলবো এই লেখায়।

১— পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নারীবাদ।
প্রথমেই স্পষ্ট করে নেওয়া দরকার, পর্ন ইস্যুতে নারীবাদ দুই ভাগে বিভক্ত। একটা ভাগ হলো রেডিকাল ফেমিনিজম, অন্য অর্থে সেক্স-নেগেটিভ ফেমিনিজম। অপরটি লিবারেল ফেমিনিজম বা সেক্স-পজেটিভ ফেমিনিজম।
সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। মূলত এটি যাত্রা শুরু করে রেডিকাল ফেমিনিজমের বিরোধীতা করে। সেক্স-পজিটিভ ফেমিনিজমের কী-আইডিয়া হলো, নারীর সেক্সুয়াল ফ্রীডম রয়েছে। আর সেই ফ্রীডমগুলোর তালিকার একদম শীর্ষে রয়েছে পর্নগ্রাফি। অর্থাৎ রেডিকাল ফেমিনিজম যেসকল ব্যাপারগুলোর বিরোধীতা করে আসছিলো, সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম তার সবগুলোর বৈধতা দেয়। যেমন, নারীর জন্য পর্ন দেখা, পর্নে অভিনয় করা। এমনকি লক্ষণীয় যে, যে ক’জন নারীবাদির হাত ধরে সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের যাত্রা শুরু, তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই পর্ন অভিনেত্রী ছিলেন (উইকিপিডিয়া দেখুন) ।

সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের প্রথম উল্লেখযোগ্য অর্জন বলা যায় ১৯৮২ সালের একটি ঘটনাকে। সেটা ছিলো নারীবাদিদের দীর্ঘদিনের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘মিস ম্যাগাজিনে’ একটি নগ্ন বিজ্ঞাপন ছাপানোকে কেন্দ্র করে। রেডিকাল ফেমিনিস্টদের আপত্তি ছিল যে, এর দ্বারা নারীকে অব্জেক্টিফাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্ত মিডিয়া, কর্পোরেশন হাউজগুলো সেক্স পজিটিভ ফেমিনিস্টদের পাশে এসে দাঁড়ায়। অবশেষে কয়েক মাসের দেনদরবার শেষে বিজ্ঞাপনটি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। আর এভাবেই লিবারেল ফেমিনিস্টরা একটা বিজয় অর্জন করে।

এখানে লক্ষনীয় যে, মিডিয়া ও কর্পোরেশনগুলো লিবারেলদের পাশে দাড়িয়েছিলো। তার কারণও ছিলো। ক্যাপিটালিস্ট অর্থব্যবস্থায় সেই নব্বই দশকের এক্সট্রিম সেক্সুয়ালাইজেশনের যুগে যেখানে একটা বাল্বের বিজ্ঞাপনেও বিকিনি পরা মডেল দরকার হত তখন লিবারেলদের পিছনে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে লাভজনক ছিলো। একইসাথে, সেইসময়কার পারিবারিক-সামাজিক রক্ষণশীলতার যে অবশিষ্টাংশের কারণে কোনো মেয়ে ভোগ-প্লেবয় টাইপের ম্যাগাজিনে মডেল হলে স্কুল-ফ্যামিলি থেকে বের করে দেওয়া হত, সেখানে লিবারেল ফেমিনিস্টরা মিডিয়ায় নগ্ন হবার জন্য একটা মোরাল গ্রাউন্ড দাড় করাতে পেরেছিলেন। যেখানে সিনেমা কিংবা ম্যাগাজিনে কেবল পেশাদার নারীরাই নগ্ন হতেন সেখানে সাধারণ মেয়েদের জন্য তারা এটাকে ট্যাবু ভাঙ্গার প্রতীক, স্বাধীনতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বলে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছিলেন। আর তাই লিবারেলদের পেছনে পয়সা ঢালাই ব্যবসায়ের বিবেচনায় লাভবান ছিলো।
আর সেটাই হয়েছে। মাত্র কয়েক বছর আগে জন্ম নেওয়া সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম পেল সমস্ত মিডিয়া কাভারেজ, কর্পোরেট সাপোর্ট আর রেডিকাল ফেমিনিস্টরা মিডিয়াতে হয়ে পড়লো একঘরে। ৩০ বছর পর, ২০২০ সালে এসেও সেই ব্যপারটাই বহাল আছে। এখন ফেমিনিজম বলতে (প্রায় সবখানেই) কেবল সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমকে বোঝায়। আর রেডিকালদের জন্য জুটেছে সেক্স নেগেটিভ, Whore-phobic, ট্যাগগুলো যেগুলো এখনকার নতুন প্রজন্মের ফেমিনিস্টরা সোশাল মিডিয়াতে রেডিকাল ফেমিনিস্টদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।

২— পর্ন ইন্ডাস্ট্রির অর্থনীতি ও নারীবাদ
পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়ের ব্যপারে জানতে হবে। কোম্পানীর নাম ‘মাইন্ডগীক’। কানাডার মন্ট্রিলের এই কোম্পানী বিশ্বের পর্ন ব্যবসার সবচেয়ে বেশী অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের টপ ১০টি পর্ন সাইটের ৬টিই তাদের। ১৫০টিরও বেশী মেজর পর্ন স্টুডিওর মালিকও তারা। প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনের বাইরে পর্নের সবচেয়ে বেশী রেভিনিউ জেনারেট করে বিজ্ঞাপন, এখানেও একচেটিয়া ব্যবসা করে মাইন্ডগীকেরই সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ‘ট্রাফিক-জাঙ্কি’।
সবচেয়ে বড় পর্ন কোম্পানী হলেও তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আর নারী পাচারের মারাত্মক কিছু অভিযোগ রয়েছে। আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন, মূলধারার লিবারেল ফেমিনিস্টরা মাইন্ডগীকের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করে তা কোম্পানী বন্ধের জন্য নয়, বরং আরো বেশী নারী এমপ্লয়ি নিয়োগ দেওয়ার জন্য।

পর্ন ইন্ডাস্ট্রির অর্থনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে নারীবাদ ও নারীবাদিরা। নিচে দেখে নিন পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ে তাদের ভূমিকা-
২.১— পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ডিমান্ড
আর পাঁচটা ইন্ডাস্ট্রির চাইতে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ডিমান্ড একটু আলাদা। পৃথিবীর প্রায় সব পেশায় অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, এখানে নয়। এখানে একজন অ্যামেচার মেয়ে রেগুলার কারো চাইতে বেশী টাকা পায়।
পর্নের ডিমান্ড সম্পর্কে আইডিয়া পাবার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, কি ধরণের পর্ন সার্চ করা হচ্ছে সেটা জানা।
এইখানে একেবারে লিডিং পজিশনে থাকেন নারী সেলিব্রেটিরা, স্বাধীন-ক্ষমতাবান নারী হিসেবে যাদেরকে দিন-রাত পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এমন একজন নারী সেলেব্রেটিও নেই যার নামের শেষে পর্নের কীওয়ার্ড লাগিয়ে সার্চ করা হয় না। এবং এতে সাড়া দিয়ে পর্নে পা বাড়িয়েছেন নারীদের রোল মডেল বনে যাওয়া বহু সেলিব্রেটি।
অন্যভাবে বললে, ক্ষমতায়ন আর খ্যাতি নারীদেরকে অতি চাহিদাসম্পন্ন পর্ন সিম্বল বানাচ্ছে।
একইভাবে, আপনি যদি গত কয়েক বছরের সার্চ কী-ওয়ার্ডগুলোর দিকে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন কীওয়ার্ড “কোরিয়ান পর্ন” টপ টেনের মধ্যে। কারণটা খুবই বোধগম্য, কে-পপ আর কে-ড্রামা।

পর্ন ইন্ডাস্ট্রি একটা এক্সট্রিমলি ডিমান্ড ড্রাইভেন ইন্ডাস্ট্রি। এখানে দর্শকরাই ঠিক করে সাপ্লাই কী হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাজারখানেক দর্শক ক্যান্সার রোগীর পর্ন সার্চ করে তাহলে কিছুদিন পর সত্যি সত্যি ক্যান্সার রোগীর পর্ন পাওয়া যাবে (সিরিয়াসলি)।
পর্নে আসার পর মেয়েদের অত্যন্ত কমন একটা ফেমিনিস্ট যুক্তি দেখাতে দেখা যায়। সেটা হল, “আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত, আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে কার কী?”
অত্যন্ত অ্যাবসার্ড একটা যুক্তি। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে এসে কাপড় খুলে পয়সা কামাচ্ছে এটা মোটেও তার সিদ্ধান্ত নয়, মার্কেট চেয়েছে তাই। পাল্টা যুক্তি হিসেবে বলা যায়, একান্তই নিজের দেহ আর সিদ্ধান্ত থাকার পরেও পঞ্চাশ বহর বয়সী কোনো মহিলা কেন পর্নে আসছে না? সহজ উত্তর, মার্কেট চায়না তাই।

আজকের ইন্টারনেট পর্ন মার্কেটের ডিমান্ড তৈরি করার জন্য নারীবাদকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সে ব্যাপারে ধারণা দিতে আমি বিয়ের প্যাটার্নের ভিত্তিতে ব্যপারটা দুই ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমতঃ অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয় যেসব দেশে, যেমন আমাদের দেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশ, আরব বিশ্ব ও বাকি মুসলিম দেশগুলো। আর দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে, যেসব দেশে লিভ টুগেদার বৈধ- পশ্চিমা বিশ্ব ও বাকি দুনিয়া।
দেখে নিন-

২.১.১— অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয় যেসব দেশে
অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য যেটা, অর্থাৎ এখানকার পুরুষদের জন্য একরকম গ্যারান্টি থাকে যে জীবনে সে কাউকে না কাউকে পাবেই, পরিবার থেকেই সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পশ্চিমা সমাজের মত না , যেখানে নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া না মিললে একটা লম্বা সময় ধরে কিংবা সারা জীবন ধরেও সিঙ্গেল থেকে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো, এখানেও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরও বিয়ে হয়, আবার একজন রিকশাচালকও নিশ্চিন্তে সংসারের স্বপ্ন দেখতে পারেন। দেখুন, একটা ছেলে উপযুক্ত হবার পরপরই যদি বিয়ে করে সংসার শুরু করে তাহলে পর্নের তার সাথে কিছুই করার নেই। আর তাই অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ ভিত্তিক সমাজে পর্নের মার্কেট তৈরির একমাত্র উপায় হলো বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া। একথা সূর্যের আলোর মত সত্যি, বিয়ে নিয়ে এই অঞ্চলে যত প্যাঁচ লাগানো হয়েছে তার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো পর্নের মার্কেট তৈরী। একটা মাল্টিবিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি, এর মার্কেটিংয়ের জন্য অনেক কিছুই করা হয় যা পাবলিকের ধারণার বাইরে। আর তাতে অন্যতম টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নারীবাদ ও নারীবাদিদেরকে। বিয়ে ঠেকাতে কারা সবার আগে এগিয়ে আসে আর বিয়ের বয়স পিছাতে কারা সবচেয়ে সরব তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।
তবে আরো কিছু ফ্যাক্টর উল্লেখ করতেই হবে। দুটো মানুষের পবিত্র সম্পর্কের মাঝখানে কিছু ব্যবসায়ী ঢুকে হাজার রকম অপ্রয়োজনীয় খরচ যোগ করে বিয়েকে একটা চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে। পরিসঙ্খ্যান বলছে, একজন ভারতীয় পুরুষ জীবনে যত টাকা আয় করে তার ৫ ভাগের একভাগ বিয়েতে খরচ করতে হয়।

এবার আরব বিশ্ব নিয়ে বলি। আপনারা প্রায়ই সংবাদ দেখে থাকবেন, পর্ন দেখায় শীর্ষে অতগুলো মুসলিম দেশ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সংবাদ গুলোর কিছু কিছু সত্যি। কিভাবে হলো? চলুন দেখি-
আরবে গড়ে একটা বিয়েতে খরচ হয় প্রায় ১,৮৫,০০০ ডলার (প্রায় দেড় কোটি টাকা)। যেখানে ১৬ টি আরব রাষ্ট্রের হিসেবে গড় চাকরির মাসিক বেতন ১,২০২ ডলার। আমি হিসেব করে দেখলাম, শুধু বেতনের টাকা জমিয়ে বিয়ে করতে একজন আরব যুবকের কমপক্ষে ১২ বছর সময় লাগবে। আর তাই আরবে পুরুষদের গড় বিয়ের বয়স ঠেকেছে ৩০শের পরে। স্কলারদের মতে, ইতিহাসে কখনো এত লম্বা সময় ধরে মুসলিম যুবকেরা ‘ভার্জিন’ থাকেনি। যখন শরীয়াহ ছিলো তখন দ্রুত বিয়ে হত, শরীয়াহ না থাকাকালীন বয়সের তো কোনো বালাই ছিলো না, কিন্তু এখনকার মত মাঝামাঝি অবস্থা কখনো হয় নি। বিয়ে কঠিন, সেক্স অসম্ভব। আর আরব যুবকদের সঙ্গী তাই পর্নগ্রাফি, একলা একটা ঘর আর অবধারিতভাবে, মাস্টারবেশন। মুসলিম বিশ্বে পর্নগ্রাফির প্রসারে সবচেয়ে বড় বাধা মনে করা হত যেই রক্ষণশীলতাকে, সেই রক্ষণশীলতাকে পুজি করেই মুসলিম বিশ্বে পর্নের একটা গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট তৈরি করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে নারীবাদের ভুমিকা কোথায়। উত্তর হলো, এখানে নারীবাদ অপ্রয়োজনীয়। নারীবাদ দিয়ে যে ব্যবসা হত সেটা নারীবাদ বাদেই করিয়ে নেওয়া গেছে। বোঝার জন্য বলি, সারা বিশ্বে ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করে বেড়ানো আমেরিকা রাজতন্ত্রে চলা সৌদি আরবে ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করতে যায় না কেন?
কারণ সেখানে ডেমোক্রেসি ছাড়াই পশ্চিমা স্বার্থ খুব ভালোভাবে রক্ষা হচ্ছে।
আসলে ফেমিনিজম, ডেমোক্রেসি এগুলো টুল মাত্র, আসল জিনিস হলো ব্যবসা। তবে এর পরেও আরবের নারীবাদ নিয়ে আমার “মুসলিম বিশ্বে নারীবাদ” শীর্ষক লেখায় লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

২.১.২— অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ মেইন্সট্রিম নয় এরকম দেশসমূহ
যেখানে বিয়ের বাধ্যবাধকতা নেই, ডেটিং মেইন্সট্রিম। তবে এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে কিছু লোকের জন্য। যেমন দেখতে ভালো নয় টাকা পয়সা নেই এরকম আরকি। একজন হোমলেস ব্যাক্তির সাক্ষাতকার দেখেছিলাম, ৩৫ বছরেও কোনো ডেইটে যেতে পারে নি।
আমাদের দেশে যেমন কোনো না কোনো সময় বিয়ে হয়েই যায়।
তবে এখানে আমার পয়েন্টটা ভিন্ন। একসময় পশ্চিমা রোমান্স সারা দুনিয়ার কাছেই ঈর্ষার ব্যপার ছিলো। পশ্চিমাদের থেকে আর কিছু নিক না নিক, পশ্চিমা রোমান্স ছিল আদর্শ। এখন সেটা অতীত।এখন ব্যাপারটা এরকম হয়েছে, এমনও দিন যাচ্ছে, একজন পুরুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাবার আগ পর্যন্ত সাবওয়েতে, অফিসে, রেস্টুরেন্টে সারাদিনে যতজন মহিলার সাথে দেখা হয়েছে, একজনের সাথেও ভালো কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি। ব্যাপারটা অনেক বিস্তর।
ডিভোর্স, অস্বাস্থ্যকর রিলেশনশীপ, নারীদের দ্বারা পাবলিক হ্যারাসমেন্ট, এমনকি নারী ঘটিত কেইসে কোর্ট-কাছারী জেল-জরিমানা এসবের অভিজ্ঞতা ম্যাক্সিমাম পশ্চিমা পুরুষেরই হয়েছে। আগে আদর্শ নারী বলতে সবখানেই বুদ্ধিমত্তা-সোন্দর্য-নারীত্বের ছাপ রেখে যান এরকম কাউকে বোঝানো হত, সেই জায়গা এখন নিয়েছেন যিনি পুরুষের সাথে গলাবাজি করে কোনোভাবে জিতে যান এরকম কেউ।
ব্যাক্তিগত আর সোশ্যাল লাইফ মিলিয়ে একজন পুরুষ যখন ঘরে ফিরছে তখন মাথায় হাজারটা স্ট্রেস , নিজের ঘরে ব্রোকেন ফ্যামিলি। পর্নের জন্য পারফেক্ট পরিবেশ। সাইকোলজি টূডের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫৩ থেকে ৭০.৮% পুরুষ কোনো না কোনোভাবে এইসব ব্যাক্তিগত-পারিবারিক সমস্যা ভুলতে পর্ন দেখেন। (রেফারেন্স-১)
এর বিপরীতে পর্ন কী অফার করছে? বাস্তব দুনিয়ার কোনো রগচটা মেয়ে নয়, বরং অত্যন্ত বাধ্য আর দুর্দান্ত সৌন্দর্যের অধিকারী, যারা করে দেখাচ্ছে তার পছন্দের অ্যাক্ট। যিনি পর্ন দেখছেন তিনি ইচ্ছেমত বয়স আর ‘ফিচার’ সেট করে আনলিমিটেড সাপ্লাই পাচ্ছেন একদম ফ্রী, তাও আবার নিজের জায়গা থেকে এক ফুট দূরে না গিয়েই। এর সাথে যোগ করুন আধুনিক ভার্চুয়াল আর অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেক্স টয়। বাস্তবের চেয়ে ভার্চুয়াল লাইফ বহুগুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

দেখুন, এখানে সোজা একথা বললে মিলাতে কষ্ট হতে পারে যে নারীবাদ পর্নের ডিমান্ড সরাসরি তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু একটু ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে, যেসব ম্যাক্রো ফ্যাক্টরগুলো অগুণতি পুরুষকে পর্নের দর্শক বানিয়ে দিচ্ছে তার প্রত্যেকটার জন্য নারীবাদ কোনো না কোনোভাবে দায়ী। একজন পুরোদস্তর ফ্যামিলি ম্যান, মোটামুটি মানের আয় রয়েছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার, তার জীবনে পর্নের কোনোই দরকার নেই। তিনি যদি আসক্ত হয়েও যান, স্ত্রী-সন্তানদের কারণে তাকে ফেরত আসতে হবে। ঠিক এই জায়গাতেই বিশৃংখলা করে দিয়েছে নারীবাদ। নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ককে নষ্ট করতে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা নারীবাদের।

এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে লন্ডনগ্রুপের এই বক্তব্যটি দেখতে পারেন- (রেফারেন্স-২)

২.২— পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাপ্লাই
আধুনিক পর্নের শুরুটা যারা করেছিলেন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাপ্লাই কোথা থেকে আসবে সেটা নিয়ে। নগ্ন নারী দেখা লোকের সংখ্যা কোনোদিন কমে যাবে ব্যাপারটা অবাস্তব। তাই ডিমান্ড নিয়ে ভাবতে হয়নি। বরং বিরাট সংখ্যার চাহিদার বিপরীতে এত মেয়েকে নগ্ন হতে রাজী করানোর মধ্যেই তাদের সমস্ত উদ্যোগ আবর্তিত ছিলো। ডিজিটাল পর্নের শুরুটা- মানে নব্বই দশকের দিকে পশ্চিমা সোসাইটিতে পর্নের আকাশছোয়া চাহিদা থাকলেও সাপ্লাই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কারণ তখনকার সময়ে পারিবারিক ও সামাজিক সেই পুরোনো কাঠামো ইন্ডাস্ট্রির জন্য ছিলো সবচেয়ে বড় বাধা । উদাহরণস্বরুপ, সেই সময়ে কোনো মেয়ে কোনো ম্যাগাজিনে নগ্ন মডেল হলে ফ্যামিলি থেকে , স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হত। পাবলিকলি শেমিং এর শিকার হতে হত, নিজেকে এবং পরিবারের লোকজনকে। তাই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাপ্লাইটা কেবল পেশাদার বেশ্যাদের কাছ থেকেই আসতো। কিন্তু কিছু মৌলিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন একজনকে অনেকগুলো প্রোডাকশনে ব্যবহার করা। এছাড়া এসব অভিনেত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন মোটামুটি বয়স্ক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অল্পবয়সীদের চাহিদা দেখা দেয়। আর সেখানেই আমরা নারীবাদকে ফুল অন অ্যাকশনে দেখতে পাই।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, যেই সময়টাতে ডিজিটাল পর্ন ডালপালা মেলছে সেই কাছাকাছি সময়েই সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের যাত্রা শুরু, পর্নকে সমর্থন করেই যাদের জন্ম। ব্যাপারটা কি কাকতালীয়?
মোটেই না।
কাকতালীয় হত যদি সরাসরি পর্নে অভিনয় করা নারীবাদিরাই এর উদ্যোক্তা না হতেন, পর্ন প্রডিউসার-ডিরেক্টরদের সাথে এসব নেত্রীদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক না থাকতো।

সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম সাপ্লাইয়ের ব্যাপারটা পুরোপুরি পালটে দিলো। একদিকে পর্ন-অভিনেত্রী নারীবাদিদের মিডিয়াতে দিনরাত হাইলাইট করে, তাদেরকে নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে নতুন অনেককেই ইন্ডাস্ট্রিতে আস্তে আগ্রহী করে তোলা গেল। স্বয়ং নারীবাদিদেরকে মুল ইন্ডাস্ট্রিতে মুখপাত্র হিসেবে দেখিয়ে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা যারা দ্বিধায় ছিলেন তাদের জন্য মোরাল গ্রাউন্ড ক্লিয়ার করা হল। আর একমাত্র বাধা হিসেবে ছিলো রেডিকাল ফেমিনিজম, তাদেরকে সেক্স নেগেটিভ ট্যাগ দিয়ে একরকম একঘরে করা হল।

এসবের ফল ফলেছে। মাত্র কয়েক বছরের মাথায় ইন্ডাস্ট্রিতে বুস্ট দেখা গেল। সেই ধারা এই ২০২০ সাল পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে উপচে পড়া সাপ্লাই। বরং মেয়েদেরকে বড় স্টুডিওগুলোর বাইরে ওয়েটিং বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়।

পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাপ্লাই মুলত দুই ভাবে আসে। স্বেচ্ছায় এবং পাচার হয়ে। বিষয় দুটো নিয়ে কথা বলা যাক।

২.২.১— স্বেচ্ছায়
পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েরা স্বেচ্ছায় আসার কারণ দুটো। প্রথমটা অবশ্যই টাকা। দ্বিতীয় কারণও টাকা তবে এর সাথে অ্যাডভেঞ্চার, এম্পাওয়ারমেন্ট, ক্যারিয়ারের ইলিউশন ইত্যাদির প্রলেপ যোগ হবে।
দুইভাগে ভাগ করে বলা যায়। অল্পবয়সী যারা আসে তাদের একমাত্র উদ্যেশ্য থাকে টাকা কামানো। এই বয়সীদের চাহিদাও সবচেয়ে বেশী। ২০১৯ এর গড় হিসাব অনুযায়ী একজন টিনেজ পর্ন অভিনেত্রী প্রতি শুটের জন্য ৮০০-১০০০ ডলার পেয়ে থাকে, একেজনের ক্যারিয়ার গড়ে ছয় মাস স্থায়ী হয়ে থাকে। এত অল্প মেয়াদের কারণ হল নতুনদের ব্যাপক চাহিদা, আর যেহেতু সে অলরেডি এক্সপোজ হয়ে গেছে তাই তার পেমেন্টের পরিমাণ কমতে থাকে এবং আরো ভায়োলেন্ট সিনের জন্য চাপ দেয়া হয়। এই ক্যাটাগরির প্রায় অর্ধেকই আসে পর্নে একটা সিরিয়াস ক্যারিয়ার গড়ে স্বাবলম্বি হতে , কিন্তু শতকরা ৯৯ ভাগই ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয় ভাগে যারা রয়েছে অর্থাৎ ২২+ বছর বয়সী, এদের চাহিদা তুলনামূলক কম হলেও সাপ্লাই সবচেয়ে বেশী। কারণ এই বয়সে সাধারণতঃ ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যায়। অনেকের লোন থাকে, ক্যারিয়ার গড়ার তাড়া থাকে। কিন্তু তাই বলে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতেই কেন? এর উত্তর খুজতে আমি অসংখ্য ইন্টারভিউ পড়েছি। একজনের উত্তর তুলে ধরছি, ” আমি মনে করি অতিমাত্রায় পুরুষ শাসিত পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরো বেশী সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ দরকার। এটি একটি স্বাধীন পেশা এবং নারীদের জন্য ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে।” (হাফিংটনপোস্ট থেকে)

আরেকটা ব্যপার উল্লেখ না করলেই নয়, নারী রোল মডেল হিসেবে পরিচিত বহু ক্ষমতাবান নারী ব্যপক চাহিদার প্রেক্ষিতে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে পা বাড়িয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক মিস ওয়ার্ল্ড, হলিউডের অভিনেত্রী, গায়িকা অ্যাথলেট, ইন্টারনেট সেলেব্রেটি এমনকি নারী পলিটিশিয়ান পর্যন্ত।

২.২.২— পাচারকৃত
পর্ন ইন্ডাস্ট্রির বড় অংশের ব্যবসা হলো পাচারকৃত নারীদের দিয়ে। আধুনিক ইন্টারনেট পর্নের জন্মস্থান হিসেবে খ্যাত ক্যালিফোর্নিয়া পর্ন অভিনেত্রীদের মাত্র ৩০% সাপ্লাই দেয়। বাকিটা আসে সারা আমেরিকা তথা বিশ্ব থেকে।

সাদা চোখে দেখে মনে হতে পারে নারীবাদিরা বেশ ব্যনার ট্যানার নিয়ে দাড়াচ্ছে, প্রতিবাদ করছে- এগুলো আইওয়াশ বললেও ভূল হবে না। আসল চিত্র দেখানোর কিছু ফ্যাক্ট উল্লেখ করছি-
▰ চাইল্ড পর্ন ও ভায়োলেন্ট পর্নের ৮৬% সাপ্লাই আসে ফস্টার কেয়ারগুলো (অনেকটা আমাদের দেশের এতিমখানার মত)। তবে সব মেয়েদের যে মা বাপ নেই তা নয়। ফস্টার হোমে বাচ্চাদের সবচেয়ে রেখে আসে ডিভোর্সি মায়েরা। এখানে উল্লেখ্য, আমেরিকাতে বাচ্চাদের নিয়ে মামলায় প্রায় ৯০% সময় বাচ্চাকে মায়ের জিম্মাতেই দেয়া হয়।
বাপ থেকেও থাকছে না, মা কাজ নিয়ে বিজি তাই প্রেডিটরদের সহজ শিকার ফস্টার হোমে রেখে যাওয়া মেয়েরা। এদের দিয়ে যেকোনো ধরণের পর্ন বানানো সম্ভব, কেউ কিছু বলবে না। এখানে মূল প্রভাবক হিসেবে সেই নারীবাদ- ডিভোর্সের এই মহামারীর জন্য নারীবাদ কতটা দায়ী, একটা নির্বোধেরও বোঝার কথা।

▰ একটা রিসার্চ বলছে, পুরুষ মাত্রই ধর্ষক আর নারী মাত্রই বিশ্বাসযোগ্য- এই ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভ বহু বছর ধরে গেলানো হয়েছে। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এটাক খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নারী পাচারের মূখ্য ভূমিকায় থাকা প্রেডিটরদের অর্ধেকের বেশীই (৫২%) নারী। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ট্রাফিকিং নিয়ে সাড়া জাগানো ডকুমেন্টারি ‘হট গার্লস ওয়ান্টেড’ এ দেখানো হয়েছে অনলাইনে মেয়েদের রিক্রুটিংয়ের কাজটা যারা করেন তাদের অধিকাংশই নারী।

▰ ভায়োলেন্ট পর্নের আরো বড় একটা সাপ্লাই আসে পেশাদার বেশ্যাদের থেকে। আমেরিকার ৪৯% বেশ্যা জানিয়েছে, তাদের কোনো না কোনোভাবে পর্নে যুক্ত করা হয়েছে।

▰ নারীবাদিদের অন্যতম বড় এজেন্ডা সমকামী পর্ন, আরো স্পেসিফিক করে বললে লেসবিয়ান পর্নের বড় অংশ বানানো হয় পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের দিয়ে। পাচারের শিকার যারা পর্নে এসেছে তাদের ৪০% জানিয়েছে তাদের সমকামী পর্নে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

৩— অ্যামেচার পর্ন
পর্নের যে ফর্মটির ব্যাপারে নারীবাদ সবচেয়ে পজিটিভ ছিলো সেটা হল অ্যামেচার বা ওয়েবক্যাম পর্ন। নারীবাদিদের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে এই পর্নের পক্ষে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, একটা মেয়ে স্বেচ্ছায় নিজের রুমে থেকেই যদি ভালো মানের আয় করে, আবার নিরাপত্তার ব্যাপারেও ভাবতে হয় না, তাহলে সেই পেশা নারীদের জন্য দারুণ উপযোগী। একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট মেয়ে যেকোনো চাকরীর চেয়ে ওয়েবক্যামের সামনে বসে বেশী আয় করতে পারে। তারসাথে যোগ হয়েছে ক্ষমতায়ন, অর্থাৎ একটা মেয়ে তার যখন ইচ্ছে ক্যামেরার সামনে বসবে, ইন্ডাস্ট্রীতে ঢুকতে হচ্ছে না।
এইসব ব্যাপারগুলো আধুনিক নারীদের দারুণভাবে আকর্ষণ করছে এই পেশায়। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ শুধু ওয়েবক্যাম পর্নের মার্কেটই ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পপুলার একটা ওয়েবক্যাম পর্ন সাইটে এক দিনে ৪০ মিলিয়ন ভিজিটর ঢোকে। হাইস্কুলের ছাত্রী থেকে মাঝবয়েসী , কয়েক বাচ্চার মা, সবধরণের নারীরাই এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। আর এখন করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলায় মার্কেটটা আকাশ ছুয়েছে। উল্লেখ্য, কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া ওয়েবক্যাম পর্নের পারফর্মার প্রায় শতভাগ নারী আর দর্শক প্রায় শতভাগ পুরুষ।

ওয়েবক্যাম পর্নের সাথে নারীবাদের সম্পর্কটা ইন্টাররিলেটেড। একদিকে যেমন আসলে টাকা আয়ের জন্য নারীরা ক্যামেরার সামনে এসে তাদের ভার্চুয়াল বেশ্যাবৃত্তি নারীবাদি লজিক দিয়ে ভেরিফাই করছেন। অপরদিকে নারীবাদিদের তরফ থেকে ওয়েবক্যাম পর্নকে অন্যতম স্বাধীন পেশা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাতে আরো বেশী নারীকে যোগ দেবার জন্য বলা হচ্ছে। আরো আগ বাড়িয়ে কিছু নারীবাদি বলেই ফেলেছেন, এখনকার নারীর জন্য ওয়েবক্যাম পর্নের চেয়ে বড় কোনো নারীবাদি পেশা আর নেই, কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, নারীর ইচ্ছার প্রকাশ, নারীদেহের চড়া মুল্য , পুরুষতন্ত্রের উপর চপোটাঘাত ইত্যাদি ইত্যাদি।

এবার বাস্তবতা। ওয়েবক্যাম পর্নের যে কোর কন্সেপ্ট, পয়সা খরচ করে নগ্ন নারী দেখা, এই পয়সাগুলো আসছে পুরুষের পকেট থেকে। আর যেহেতু পুরুষ পয়সা দিচ্ছে, তারাই এই মার্কেটের নিয়ন্ত্রক। ওয়েবক্যাম পর্নের সাইটগুলোতে এসে দর্শক যা বলছে তাই করছে, যেভাবে করতে বলছে সেভাবেই করতে হচ্ছে, ভালো লাগলে ভার্চুয়ালি পয়সা ছুড়ে দিচ্ছে, আবার দর্শকের কথা না শুনে উপায়ও নেই, মার্কেট অত্যান্ত স্যাচুরেটেড, পাশেই অন্তত পাঁচটা মেয়ের আইডি জ্বলজ্বল করছে , এক সেকেন্ডও লাগবে না সরে যেতে, তারমানে আয়ও বন্ধ। একটা মেয়েকে কয়েকজন পুরুষ মিলে যা ইচ্ছে তাই করাচ্ছে, ভালো লাগলে পয়সা ছুড়ে দিচ্ছে, ভালো না লাগলে তাকেই ছুড়ে ফেলছে, মেয়েটাও পয়সার জন্য তাদের সবরকম কথা মানতে বাধ্য হচ্ছে- এটাই হলো নারীবাদিদের বাতলে দেওয়া এখনকার সবচেয়ে স্বাধীন পেশার নমুনা।

আরো ব্যাপার আছে। নারীবাদিদের ওয়েবক্যাম পর্নের জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটিং পয়েন্ট ছিলো যেহেতু পর্ন ইন্ডাস্ট্রীতে নারী নির্যাতন হয় তাই ওয়েবক্যাম পর্নের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রির বাইরে বেরিয়ে আসা গেছে। তবে আসল ব্যপার ভিন্ন। মেয়েরা নিজের বেডরুমে পর্ন তৈরি করলেও সেগুলো বিক্রির জন্যে সেই পুরনো পর্ন সাইটগুলোর কাছেই ফেরত যেতে হয়েছে। আর বড় বড় স্টুডিওগুলো পটেনশিয়াল মার্কেট দেখে নিজেরাই ওয়েবক্যাম পর্ন বানাতে লেগে গেছে। তাদের ভালোমানের মেকআপ, দামী ক্যামেরা আর আধুনিক স্টুডিও দ্রুত এই মার্কেটের ড্রাইভিং সিটে বসে যায়। এদের সামনে একদম অ্যামেচার লেভেলের, নিজের বেডরুমে ল্যাপ্টপের ওয়েবক্যামের সামনে বসে পর্ন বানানো মেয়েরা দাড়াতেই পারেনি। ফলে তাদের আবার সেই ইন্ডাস্ট্রীর পুরোনো খেলোয়াড়দের কাছেই ফেরত যেতে হয়েছে। এবং সেই পুরোনো ঘটনাগুলোও ফেরত আসতে শুরু করে, হ্যারাসমেন্ট, ব্লাকমেইল ইত্যাদি। এমনও সাইট আছে যারা মেয়েদের আয়ের ৭০% পর্যন্ত কেটে রাখে।

তবে নারীবাদ যতই ক্ষমতায়নের কথা বলুক, এসব ওয়েবক্যাম-গার্লদের সবার গল্প সুখের হয় না।
নারীবাদিরা ক্ষমতায়নের উদাহরণ হিসেবে তাদের কথাই সামনে আনেন যারা বছরে মিলিয়নের কাছাকাছি আয় করে। কিন্তু প্রায় ৯০% এর ক্ষেত্রেই এই গল্পটা সত্য নয়। অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা, ব্লাকমেইল করা এগুলো নিত্যসঙ্গী। অনেক সাইট রয়েছে যেখানে সারাদিন ক্যামেরার সামনে বসে থাকলেও এক পয়সা আয় নেই, যতক্ষণ না কেউ প্রাইভেট চ্যাটরুমে ডেকে নিচ্ছে। এছাড়া কেউ হয়তো কলেজ লাইফে কয়েকটা ডলারের জন্য এখানে এসেছিলো, এরপর সারা জীবনের জন্য সারা দুনিয়ার কাছে এক্সপোজ হয়ে গেছে, যা তার চাকরি, বিয়েতে ভয়ংকর প্রভাব ফেলেছে।

আরেকটা টার্ম আছে, E-Whoring. এসব মেয়েদের ইন্সটাগ্রামে নিজের ন্যুড বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেড়াতে হচ্ছে, তিনটা ফটো কিনলে আরেকটা ফ্রীর অফার দিতে হচ্ছে-এটা নিশ্চয় নারীর ক্ষমতায়নের খুব ভালো নিদর্শন নয়।

যে মেয়েটা পর্ন ইন্ডাস্ট্রীর বাস্তবতা জানতো, ওখানে পা রাখার কথা কোনোদিন ভাবেওনি, তাকে নারীবাদ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওয়েবক্যাম পর্নে রাজী করিয়েছে, কিন্তু আল্টিমেটলি তাকে ওই পুরোনো বাঘের খাচাতেই ফেলে দেওয়া হয়েছে।
(রেফারেন্স ৩ থেকে ৮)

৪— সাবেক শীর্ষ পর্ন অভিনেত্রী ও কিছু বিশ্লেষণ
কথা বলা যাক সাবেক লেবানিজ পর্ন অভিনেত্রী যিনি প্রায় ৪ বছর পর্ন অভিনেত্রীদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন, তার ব্যাপারে। যেহেতু তিনি একদম টপে ছিলেন, তাই তার কিছু ব্যাপার বিশ্লেষণ করলে ইন্ডাস্ট্রির অনেকগুলো ব্যাপার স্পষ্ট হবে। গত বছরের আগষ্ট মাসে তিনি বিবিসিকে একটা সাক্ষাৎকার দেন, সেখান থেকে কিছু ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো।
২০১৫ সালে তিনি ৩ মাসের সংক্ষিপ্ত পর্ন ক্যারিয়ার শেষ করেন। কিন্তু তার ভিডিওগুলো দেখা হয়েছে ১০০কোটিবারেরও বেশী, মাত্র একটা সাইটে। ইন্ডাস্ট্রি থেকে তার আয় ছিলো মাত্র ১২,০০০ ডলার এবং ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ার পর তিনি একটা পয়সাও পাননি। অথচ তার ভিডিওগুলো থেকে প্রডিউসাররা কামিয়ে নিয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার।
হিজাব পরে পর্নে অভিনয় করার জন্য আইএস থেকে হত্যার হুমকি পাবার পর তিনি প্রডিউসারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন ভিডিওটা সরিয়ে ফেলার জন্য, কেউ এক পয়সার দাম দেয়নি তার কথার। লক্ষণীয় যে ইনি শীর্ষ অভিনেত্রী, তার যদি এরকম পাওয়ারলেস-হেল্পলেস অবস্থা হয় তাহলে বাকী নারীরা যারা নামে বেনামে ইন্ডাস্ট্রীতে ঢুকছে তাদের কি অবস্থা? ঠিক এই কারণেই পর্ন অভিনেত্রীদের কোনোভাবেই স্টার বলতে রাজী নই।
হিজাব পরে পর্নে অভিনয় করায় নারীবাদি পাড়ায় যে উল্লাস দেখা গিয়েছিলো, আরব মেয়ে হিজাব পরে পর্নে অভিনয় করেছে, আরব স্টেরিওটাইপ ভেঙ্গেছে, আরব নারীদের নিয়ে চিরায়ত পশ্চিমা ফ্যান্টাসী ‘What’s under the veil’ এক্সপোজ করেছে, যদিও অমুসলিম। (তবে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মুখ খোলায় অনেক নারীবাদিকে তার সমালোচনা করতে দেখা গেছে)।
লিবারেল নারীবাদিরা যে পেশাগত স্বাধীনতার কথা বলে পর্নে নারীর অংশ গ্রহণকে গ্লোরিফাই করেন, তার বাস্তবতা হল, শীর্ষ এই অভিনেত্রীকে শুটিংয়ের আগে স্ক্রিপ্টটা পর্যন্ত পড়তে দেওয়া হয়নি, এটাই হয় ইন্ডাস্ট্রিতে, আর এটাই নারীর জন্য আধুনিক স্বাধীন পেশার প্রকৃত অবস্থা।

৫— পর্ন ইন্ডাস্ট্রি, হরর ইন্ডাস্ট্রি
যদি রিয়েল লাইফ হরর বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা পর্ন ইন্ডাস্ট্রি। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি একইসাথে যেমন সবচেয়ে খোলামেলা ইন্ডাস্ট্রি তেমনি সবচেয়ে রেস্ট্রিক্টেড ইন্ডাস্ট্রি। রেস্ট্রিক্টেড এই কারণে যে এখানকার ভিতরের অন্যায়গুলো সহজে বাইরে আসে না। ভিক্টিমরাও সেভাবে মুখ খুলতে চান না। তবে বাইরে না আসলেও ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধাররা যে দিব্যি আধুনিক এক জিন্দানখানা খুলে বসেছে তা ওপেন সিক্রেট।
কিছু ফ্যাক্ট দেখে নিন

৫.১— হতভাগ্য
অন্ততঃ ৯০% পর্নে ভায়োলেন্ট উপাদান রয়েছে। এর কিছু কিছু এতটাই এক্সট্রিম যে স্বেচ্ছায় কেউ করতে চাইবে না। এর যোগান দেয়া হয় পাচার হওয়া মেয়েদের দিয়ে। এর বাইরে আরও একটা সোর্স রয়েছে “রানঅ্যাওয়ে গার্লস” বা ঘরপালানো মেয়ে। শুধু আমেরিকার হিসেবে প্রতি বছর ১৫ লাখের মত কিশোর কিশোরী ঘর ছেড়ে পালায় যার অর্ধেকই মেয়ে। একটা স্টাডি বলছে, এরকম একটা মেয়ে গড়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে “সারভাইভাল সেক্স” করতে বাধ্য হয় এবং এদের ৭০% পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে আটকা পড়ে। পাচার হয়ে আসা বা রানঅ্যাওয়ে যেমনই হোক, এদের মা-বাপ অভিভাবক কেউ নেই (অন্ততঃ ট্রেস নেই) সুতরাং তাদের যেভাবে ইচ্ছে টর্চার করা যায় ইচ্ছে হলে মেরেও ফেলা যায়। এত কল্পনাতীত রকমের ভয়াবহ টর্চার, সুস্থ মানুষের জন্য হজম করা কঠিন।
অনেক টাকার ব্যবসা হওয়ায় এই পাচার সিন্ডিকেট আবার অত্যন্ত শক্তিশালী। গত বছর এক মেয়ে এই সিন্ডিকেটের ব্যাপারে মাত্র একটা টুইট করে। দুই দিনের মাথায় তার লাশ পাওয়া যায়।

৫.২— শারীরিক নির্যাতন
সাধারণ যেকোন ইন্ডাস্ট্রিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বেশ বড় করে উঠে আসে। কিন্তু যেখানে সেই সহিংসতাই মুল কন্টেন্ট সেখানে আর কী বলার।
এক অভিনেত্রী বলছিলেন, একজন পর্ন অভিনেত্রী ধর্ষিত হয়েছে একথা কে বিশ্বাস করবে?
ধর্ষণ তাই ডাল-ভাত এই ইন্ডাস্ট্রিতে। একজনের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন শুটিং শেষে ম্যানেজার লবিতে বসে থাকা মেয়েদের থেকে দুই-তিন জনকে নিয়ে বাসায় চলে যেতেন।
স্বেচ্ছায় পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়া অন্ততঃ ৭৫% নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। আর যারা পাচার হয়ে গিয়েছেন তাদের ব্যাপার তো প্রশ্নাতীত।
চড়থাপ্পড় খুবই কমন, ইন্টারনাল ব্লিডিং এতই স্বাভাবিক যে সব স্টুডিওতেই এর জন্য ফার্স্ট এইড থাকে, ১০৪ ডিগ্রী জ্বর শরীরে শুটিং করা, জখম পেইনলেস করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগ কিংবা ফিজিকাল জখম ইঞ্জুরি টেপ দিয়ে ঢেকে আবার শুটিং -খুবই কমন প্রাক্টিস।
টর্চারের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একজন সাবেক পর্ন অভিনেত্রী বলছিলেন, একবার শুটিংয়ের সময় তার মাথায় লাথি মারা হচ্ছিল। প্রচন্ড যন্ত্রণায় তিনি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান। অথচ সেটের কেউ সাহায্য করা দূরে থাক উল্টো দারুণ শট বলে হাততালি দিচ্ছিল।
এখন কথা হলো, পর্ন স্টুডিওগুলো এত মারাত্মক অমানবিক কাজকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে কিভাবে? একটা টুল ব্যবহার করে, এক্সিট ইন্টারভিউ। ফেমিনিস্ট টার্ম ‘কনসেন্ট’ এর নাম শুনেছেন? যা না থাকলে স্বামীও নাকি স্ত্রীর ধর্ষক হয়ে যায়, আবার কনসেন্ট থাকলে বিবাহবহির্ভূত সেক্স, অ্যাবরশন এমনকি খুনখারাবীও বৈধ । প্রত্যেক শুটিং শেষে অভিনেত্রীকে এই মর্মে সিগনেচার করতে হয় যে স্টুডিওর মধ্যে যা হয়েছে তা তার ‘কন্সেন্ট’ অনুযায়ীই হয়েছে। এটাই এক্সিট ইন্টারভিউ।

৫.৩— বেকারত্ব
বাংলায় একটা কথা আছে, বেশ্যার সাথে এক বিছানায় শোয়া গেলেও এক টেবিলে খাওয়া যায় না। এই কথাটা সাবেক পর্ন অভিনেত্রীদের সাথে খুব ভালোভাবে যায়। কারণ মানুষ সারারাত পর্ন দেখেও সকালবেলা সেই একই পর্ন অভিনেত্রীকে সুপারশপের ক্যাশিয়ার হিসেবে দেখতে চায় না। আর তাই পর্ন ছাড়ার পর অভিনেত্রীদের জন্য একটা সাধারণ চাকরী পাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ব্যাপারটা বোঝা সহজ, আধুনিক কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে সামান্য স্কান্ডালেই চাকরী থেকে বাদ দেওয়া হয়, সেখানে অলরেডী ইন্টারনেটে ‘ভিডিও’ থাকা কাউকে কোনো ফার্ম হায়ার করে না, মীটু মুভমেন্টের পরে তো আরও না।

৫.৪— স্যাড এন্ডিং
একসময়ের হটকেক হয়ে থাকা এসব গ্লামার গার্লদের শেষ পরিণতি এতটা ভয়াবহ, ভাবাও যায় না, কেউ জানতেও চায় না। ঝলমলে ক্যরিয়ার আর এম্পাওয়ারমেন্টের আশায় যারা নীল দুনিয়ায় পা রেখেছিল এমন একজনও নেই যার জীবন কালো হয়ে যায় নি। অধিকাংশই ড্রাগ, ডিপ্রেশন আর একগাদা রোগ নিয়ে বাকি জীবন পার করেন, অনেকেরই অকাল মৃত্যুতে শেষ হয় সবকিছু।
পর্ন অভিনেত্রীদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে সবচেয়ে কমন অর্জন হলো এসটিডি ( সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ)। একেকজনের কমপক্ষে ৫-৬ টা। ক্যরিয়ার শেষে ম্যাক্সিমাম টাকা চলে যায় এর চিকিৎসায়। একজন ফ্রেঞ্চ পর্ন অভিনেত্রীর ব্যাপারে পড়েছিলাম, তার মোট ২২ টা সার্জারি লেগেছে, এখনো সুস্থ হননি। একইসাথে অবধারিত হয়ে যায় অর্থকষ্ট। এক সাবেক অভিনেত্রী বলছিলেন, একটু বয়স্ক হয়ে যাওয়ায় যেইমাত্র অবসর নিলাম, ম্যানেজারের কল আসা পুরো বন্ধ হয়ে গেল, স্টুডিওতে হয়ে গেলাম অবাঞ্চিত, ওখানে এখন নতুন মেয়েদের কদর। খাওয়ার পয়সা জোগাড় করাটাই এখন কষ্ট।
একটা বিরাট অংশ হয়ে যান হোমলেস। অনলাইনে ৪২৭ মিলিয়ন ভিউ পাওয়া একজন পর্ন অভিনেত্রীকে দেখা যায় লাস ভেগাসের টানেলের নিচে বাস করতে। ৯০ দশকের একজন নামকরা পর্ন অভিনেত্রী জেলে গেছেন অপরিশোধিত ট্যাক্সের মামলায়।
বাকি থাকে মরে যাওয়া। সেটাও এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী ঘটছে । সবচে বড় কারণ-সুইসাইড। গত বছর মাত্র তিন মাসে পাচ জন উঠতি পর্ন অভিনেত্রী সুইসাইড করেন। আর রোগে শোকে ভূগে অধিকাংশেরই পঞ্চাশের বেশী আর বাচা হয় না।
এই তো, মাই বডি মাই চয়েস, এম্পাওয়ারমেন্টের একটা সেক্টরের লাস্ট চ্যপ্টার।

▰ ▰ অথচ নারীবাদিদের সামনে সুযোগ ছিল পর্ন ইন্ডাস্ট্রির অমানবিকতার শিকার হওয়া এসকল নারীদের সামনে এনে তাদের ন্যায়বিচার, ক্ষতিপুরণ পাবার ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি এসকল নির্যাতনের ঘটনা ঘটার মেকানিজম খোদ ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তোলা।
নারীবাদ সেটা করেনি। রেডিকাল ফেমিনিস্টরা তো আগেই পর্নে কাজ করতে যাওয়া নারীদের অচ্ছুৎ মনে করেন। আর লিবারেল ফেমিনিস্টরা নিজেদের স্বার্থেই এই ব্যাপারগুলোতে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এমন একটা ইন্ডাস্ট্রি যেখানে পুরুষের চেয়ে নারীকে বেশী পে করা হয়-এই একটা জিনিসই তারা কেয়ার করে। এর সাথে রয়েছে পোশাক খুলবার স্বাধীনতার এজেন্ডা-তারজন্যে পর্নের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে?
পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নারীদের নিয়ে কাজ করে এরকম শীর্ষ মেইন্সট্রিম সংগঠনগুলোর একটাও নারীবাদি নয়। বরং লিবারেল ফেমিনিস্টরা তখনই ব্যানার নিয়ে দাঁড়ায় কোনো ব্যাক্তিকে যখন দায়ী করার সুযোগ থাকে, কোনো পুরুষকে অভিযুক্ত করা যায়। তাদের সেই আন্দোলন যেই ইন্ডাস্ট্রি প্রতিদিনই এরকম অমানুষিক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে সেই মেকানিজমের বিরুদ্ধে অবশ্যই নয়।
এরকম একটা ঘটনাও পাইনি, যেখানে নারীবাদিরা কোনো এক্স-পর্ন অভিনেত্রীর চিকিৎসা কিংবা চাকরীর ব্যবস্থা করেছে ।
ভিক্টিমহুড প্লে করতে ওস্তাদ এসব নারীবাদিরা যখন আসল নারী ভিক্টিমদের বেলায় মুখ ফিরিয়ে রাখে তখন তা টিপিকাল ফেমিনিস্ট হিপোক্রেসিকে আবারো মনে করিয়ে দেয়।

৬—ফেমিনিস্ট পর্ন
এবার একটু আশ্চর্য হবেন।
পর্নগ্রাফিতে নারীদের চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কোনো নিরাপত্তা নেই, পর্ন ভিডিওর প্রায় সব ডিরেক্টর পুরুষ- এসব নিয়ে নারীবাদিদের বিস্তর অভিযোগ ছিলো। তো এজন্য লিবারেল ফেমিনিস্টরা সিদ্ধান্ত নিলো কিছু করবে। তো সে সিদ্ধান্ত কি ছিলো, পর্নগ্রাফি বন্ধে কাজ করবে?
না!
বরং নিজেরা পর্ন বানাবে! মানে ব্যাপারটা এরকম, আপনার ঘর কেউ পুড়িয়ে দিচ্ছে। তো আপনি বললেন, তোমার ঘরপোড়ানো অমানবিক, তাই আমি নিজেই আমার মত করে আমার ঘর পোড়াবো। মানে আল্টিমেটলি যে আপনার নিজের ঘরই পুড়ছে সেটা বোঝার মতো আইকিউ আপনার নেই। অথচ নারীকে কাপড় খুলতে দেখে পুরুষ কবে অখুশি ছিলো? পরিসংখ্যান ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করে দেয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত লেসবিয়ান পর্নের ৬৪% দর্শক ছিলো পুরুষ।

ফেমিনিস্ট পর্নের ইতিহাস প্রায় ত্রিশ বছরের, তবে গত ৮-১০ বছরে সবচেয়ে বেশী অ্যাটেনশন পেয়েছে। লিবারেল ফেমিনিস্টরা এর পিছনে রয়েছে।
ফেমিনিস্ট পর্নের অধিকাংশই লেসবিয়ান পর্ন, এছাড়া মারাত্মক পুরুষ নির্যাতনেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কন্টেন্ট রয়েছে। এর বাইরে প্রায় সব লেসবিয়ান পর্নকেই তারা ফেমিনিস্ট পর্ন বলে ধরে নেয়।
যারা শুরু করেছিলেন তাদের বক্তব্য ছিল, মেল ডমিনেটেড মেইন্সট্রিম পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নারীকে অব্জেক্টিফাই করা হয়, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সব বর্নের, সব আকারের নারীদের জন্য পর্ন, যা নারীর ক্ষমতায়ন করবে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। নারীবাদিরা এসব কথা রাখেনি। নিচের পয়েন্টগুলো দেখে নিন।

৬.১— ফেমিনিস্ট পর্নের ডিমান্ড
ফেমিনিস্ট পর্নের যে মৌলিক স্লোগান ছিলো নারীবান্ধব পর্ন, তা তরুণ নারীবাদীদের বেশ আকৃষ্ট করে। তবে আসল ব্যপার অন্যখানে ।
শীর্ষ একটা পর্ন সাইটের সালের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মিলিয়ে প্রায় ৩০ টি দেশের সার্চের একেবারে শীর্ষে ছিল লেসবিয়ান পর্ন। একইসাথে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে সার্চের টপ লিস্টেও ছিলো এটি।
লেসবিয়ান পর্নের দর্শক একটা সময় পর্যন্ত অধিকাংশই ছিল পুরুষ। তবে সে সংখ্যা কমছে। এই সময়ে এসে প্রায় অর্ধেক দর্শকই নারী।

৬.২— ফেমিনিস্ট পর্নের সাপ্লাই
ফেমিনিস্ট পর্নের সাপ্লাই নিয়ে ভাবতে হয় নি, তৈরিই ছিল। সাপ্লাই আসছে কোন পেশাদার পর্ন অভিনেত্রীদের থেকে নয়, খোদ নারীবাদীদের থেকেই।

এখানে একটা জিনিস বুঝতে কষ্ট হয় না। পর্নের মার্কেট অ্যানালিস্টদের লেসবিয়ান পর্নের অসম্ভব চাহিদার কথা নিশ্চয় অজানা নয়, এই মার্কেট তারা কখনোই হারাতে চাইবে না। আকাশছোয়া চাহিদার বিপরীতে ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার ছিলো অগুণতি সঙ্খ্যক নতুন মেয়ে। আর এই হাইব্রিড ফেমিনিজমের যুগে এম্পাওয়ারমেন্টের প্রলেপ দিলে মেয়েরা যেকোনো কিছু করতে রাজি, এটা তাদের জন্য বড় সুযোগ ছিল। নারীবাদিরা এটাকে প্রচার করতে লাগলো এম্পাওয়ারমেন্ট হিসেবে, আর দলে দলে প্রায় সব ধরণের মেয়েরা চলল পর্নে অভিনয় করে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায়। এমনও উদাহরণ রয়েছে, আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল পাস করা একটা মেয়ে ওকালতি ছেড়ে দিয়েছিল ফেমিনিস্ট পর্নে অভিনয় করতে।

৬.৩— ফেমিনিস্ট পর্ন ও লেসবিয়ানিজম
নারীবাদিদের কাছে লেসবিয়ানিজম নরমাল LGBT এজেন্ডার চাইতে বেশী কিছু, এটি নারীবাদের জন্য পুরোপুরি পলিটিকাল স্টান্ড। থার্ড ওয়েভ ফেমিনিজম আমাদের প্রতি ৫ মিনিটে একবার মনে করিয়ে দেয় তাদের পুরুষের দরকার নেই, পুরুষ ছাড়াই তারা সবকিছু করতে সক্ষম। এমনকি পরিবার গঠন করতে, বাচ্চার জন্ম দিতেও (যদিও স্পার্ম ব্যাংকের ব্যপারে নারীবাদ সবসময়ই নীরব থেকেছে)। ব্যাপারটাকে আরো শক্তিশালী করে ১৯৮৮ সালের ফেমিনিস্ট এজেন্ডাগুলোর একটা ,
“একজন নারীকে প্রকৃত নারীবাদি হতে হলে অবশ্যই তাকে লেসবিয়ান হবার ইচ্ছা রাখতে হবে।”

পুরুষ নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সর্বশেষ ও সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ এই লেসিয়ানিজম এজেন্ডা নতুন প্রজন্মের মধ্যে লেসবিয়ান হবার হারকে বাড়িয়ে তুললেও বাস্তবতা ভিন্ন।
পরিসংখ্যান দেখা যাক। সমকামীদের মধ্যে যতগুলো বিয়ে/রিলেশন ভেঙ্গে যায় তার ৮০% ই হলো লেসবিয়ান কাপল। ১০ বছরের বেশী একসাথে ছিলো এরকম লেসবিয়ান কাপল পুরো পৃথিবীতেই হাতেগোণা। খোদ নারীবাদিদের মধ্যেই এইরকম বহু গবেষণা হয়েছে যে, এইরকম ‘অ্যালার্মিং রেটে’ লেসবিয়ান কাপলরা কেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এখানে মজার ব্যাপার হল, বেশিরভাগ বিয়ে/রিলেশন ভেঙ্গেছে কাপলদের কোনো একজন ‘পুরুষের’ সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার জন্য। এই তালিকায় অনেক সেলেব্রেটি লেসবিয়ানও রয়েছেন। এমনকি, পয়সাওয়ালা পুরুষের সাথে দেখা হবার পর নারীবাদি পরিচয় তো বটেই, নিজের লেসবিয়ান আইডেন্টিটিও ছুড়ে ফেলতে দেখা গেছে প্রকাশ্যে।

এভাবেই নারীবাদিদের অন্যতম পাওয়ারফুল রাজনৈতিক হাতিয়ার, লেসবিয়ানিজম রিয়েল লাইফে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আর তাতেই এখানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে পর্নের। ফেমিনিস্ট ডিরেক্টররা যেসব পর্ন বানিয়েছেন তাতে দেখানো হচ্ছে লেসবিয়ান ছাড়া একজন নারীর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন আর কিছুই হতে পারে না। মানে রিয়েল লাইফে যুদ্ধে হেরে সিনেমায় নিজেদেরকে বিজয়ী দেখানোর মত।

৬.৪— ফেমিনিস্ট পর্ন ও সেক্স টয় ইন্ডাস্ট্রি
সেক্স টয় ফেমিনিস্ট পর্ন কিংবা লেসবিয়ান কাপলদের জন্য অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সেক্স টয় কেবল একটা নিছক খেলনাই নয়, ফেমিনিস্টদের জন্য এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক হাতিয়ার। কারণ এটি আধুনিক নারীবাদের স্লোগান, ‘পুরুষের দরকার নেই’ এর জন্য সবচেয়ে বড় সিম্বল। যদিও এসব টয়গুলো পুরুষের জননেন্দ্রীয় রেপ্লিকেট করে তৈরি, ফেমিনিস্ট পর্নে নারীবাদিরা এটাকে ব্যবহার করছে পুরুষ ডমিনেশনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো্র জন্য।
তবে সেক্স টয় ফেমিনিস্ট পর্নে এত গুরুত্ব পাবার কারণ হল, এর নারী দর্শকরা কেবল দেখাই নয়, রিয়েল লাইফে এসব ব্যবহারও করছেন।

নারীবাদীরা এসব টয়ের নানা রকম ব্যবহার, নিজেদের অভিজ্ঞতা-পরামর্শ শেয়ার, বাজারে আসা নতুন টয়ের আনবক্সিং ভিডিও তৈরী-ইত্যাদির মাধ্যমে পুরোপুরি আলাদা একটা ইকোনোমিক ইউনিভার্স তৈরি করেছে।

তবে এখানে একটা মারাত্মক ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর কানাডার টরেন্টোতে যে ফেমিনিস্ট পর্ন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় তার স্পন্সর থাকে ‘গুড ফর হার’ নামের একটা সেক্স টয় কোম্পানি। এই ব্যাপারটা একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেয়, ফেমিনিস্ট পর্নের পিছনে যারাই থাক, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ব্যবসা। ‘ফেমিনিস্ট পর্নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন’ পুরোপুরি একটা টোপ মাত্র।
বক্তব্যগুলো রেডিকাল ফেমিনিস্টদের। মুলত সেক্স টয়ের ৩৪ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট ধরাই ছিল উদ্দ্যেশ্য। একজন সাধারণ নারীর চেয়ে সেক্স টয় একজন ফেমিনিস্টেরই বেশী দরকার, প্রোডাক্ট মার্কেটিং আর নতুন প্রোডাক্ট টেস্টের জন্য ফেমিনিস্ট পর্ন, তার উপর লাগিয়ে দেওয়া হলো ক্ষমতায়নের প্রলেপ, ফলাফল বার্ষিক ৮% এর বিশাল মার্কেট গ্রোথ ।

▰ ▰ তবে এই ২০২১ সালে এসে এটা পুরোপুরি স্পষ্ট যে, ফেমিনিস্ট পর্ন আর পাঁচটা ফেমিনিস্ট হিপোক্রেসির মতই একটা। দুটো পয়েন্ট উল্লেখ করছি।
প্রথমতঃ নারীবাদিদের দাবী ছিলো, যেহেতু মেইন্সট্রিম পর্ন ইন্ডাস্ট্রি মেল ডমিনেটেড, তাই সেগুলোর বলয় থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে নিজেদের মত একটা নারীবান্ধব ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা। সেটা হয়নি। কারণ ফেমিনিস্ট দাবী করলেও এর পিছনে ইন্ডাস্ট্রির সেই পুরনো খেলোয়াড়দেরই দেখা যায়। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, ফেমিনিস্ট পর্ন সাইটগুলোতে মনেটাইজেশনের জন্য TrafficJunky ব্যাবহার করতে দেখা যায়। যেটা কিনা মাইন্ড-গীকেরই সাবসিডিয়ারি কোম্পানী। তারা সামনে এসব নারীনেত্রীদের রাখলেও রেভিনিউ তাদের পকেটেই ঢুকেছে।
আর ফেমিনিস্ট পর্নের দর্শকদের প্রায় অর্ধেকই পুরুষ। আধুনিক কঞ্জ্যুমার ড্রাইভেন মার্কেটে শুধু টিকে থাকার জন্য হলেও ইন্ডাস্ট্রিকে সেই আগের প্যটার্নেই ফেরত যেতে হয়েছে, কারণ পুরুষেরা সেটা চায়। এই কারণে ফেমিনিস্ট পর্নের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো সাপ্লাই, যেটা কিনা খোদ নারীবাদিদের থেকেই আসার কথা ছিলো, সেটা মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ বিকটদর্শন-কিম্ভূতকিমাকার এসব ফেমিনিস্টদের দিয়ে আন্দোলন চালানো গেলেও পর্ন ব্যবসা করা যায় না। পুরুষ দূরে থাক, নারী দর্শকেরাই তাদের স্ক্রীনে দেখতে চায় না। আর তাই নারীবাদিরা যেই গালভরা স্লোগান নিয়ে এসেছিল, সব বর্ণের, সব আকারের নারীদের নিয়ে পর্ন- তা বেশিদিন চলতে পারে নি।

দ্বিতীয়তঃ পর্ন নিয়ে নারীবাদিদের যে বড় অভিযোগ ছিল, ইন্ডাস্ট্রির নারী নির্যাতন, এর সমাধান হিসেবে লিবারেল ফেমিনিস্টরা ফেমিনিস্ট পর্নকে নিয়ে আসে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কারণ দর্শকেরা ভায়োলেন্ট পর্ন চায়, শুধু টিকে থাকতে হলেও ওদিকে হাটতে হবে। ফলে, এবার নারী নির্যাতনকারী হয়ে ওঠে খোদ নারীবাদিরাই। এমনিতে ফেমিনিস্ট পর্নের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পুরুষ নির্যাতন। আর অথেনটিক পর্নের প্রমিজ করে আসলেও বাস্তবে লেসবিয়ান নয় এরকম মেয়েকে লেসবিয়ান অ্যাক্টে বাধ্য করা, সরাসরি শারীরিক আঘাত, বন্ডেজের নামে রক্তাক্ত জখম করা সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এই ফেমিনিস্ট পর্নের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে। তাই ক্ষমতায়ন করতে এসে অনেক মেয়েরই স্বপ্নচ্যুতি ঘটেছে। আর এই অভিযোগগুলো কারা করছে জানেন? বাইরের কেউ না, রেডিকাল ফেমিনিস্টরা।

৭- ভবিষ্যত
এস্কেলেশন এফেক্ট হলো পর্নে আসক্ত ব্যাক্তি আগে দেখা পর্নে আর নতুন করে আকর্ষণ বোধ করে না।তার পরেরবার আরেকটু এক্সট্রিম কিছু দরকার। এভাবে কয়েক বছর চলার পর মাত্রাটা হয়ে যায় চরম ভায়োলেন্ট আর বিকৃত। যেহেতু চাহিদা আছে তাই ইন্ডাস্ট্রিও সেরকম কিছু বানায়, ম্যাক্সিমামই পাচার হওয়া কিংবা ব্লাকমেইলের শিকার হওয়া নারীদের দিয়ে।
ব্যাপারটা ভয়াবহ রুপ নিতে যাচ্ছে। দেখুন, ঠিক আজকেই যে ব্যাক্তি পর্ন-তে এক্সপোজ হয়ে গেল, সে এই ইফেক্টের কারণে যত ভায়োলেন্ট পর্নের খোজই করুক না কেন, ইন্টারনেটে অলরেডি তা আছে, অন্তত আগামী কয়েক বছরের জন্য। কিন্তু যারা ১০-১৫ বছর ধরে আসক্ত তাদের জন্য? তাদের তো আরো এক্সট্রিম কিছু দরকার। আর তাই নারীবাদ আরো উস্কে দেয়া হবে, ফেমিনিস্ট পর্নের নামে কল্পনাতীত বিকৃত পর্ন তৈরি হবে একথা বলাই যায়।
এসব কারণে কল্পনা করা যায় না এরকম কিছু ঘটছে। কিছু কিছু স্টুডিও এখন একজন পর্ন অভিনেত্রীর সাথে ব্লাড কানেকশন রয়েছে এরকম কাউকে হায়ার করছে। কারণ, চাহিদা রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, গত বছর একজন মা তার বায়োলজিকাল মেয়ের সাথে একটা লেসবিয়ান পর্নে অভিনয় করেন।
এই লেখাটি লিখতে গিয়ে এরকম অনেক কিছু পড়তে হয়েছে, মনে হয়েছে এসব না জানাই ভালো ছিলো।

▰ ▰ ▰ সবশেষে বলা যায়, পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এমন একটা ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে নারীবাদকে ঠিক যতভাবে ব্যবহার করা যায়, করা হয়েছে। এটা একটা মাল্টিবিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি, এখানে যেই মানের কর্পোরেট মেধা কাজ করে তা গলাবাজি করে বেড়ানো বিলো-এভারেজ আইকিউওয়ালা কোনো ফেমিনিস্টের বোঝার কথা নয়। যেসব মেয়েরা ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আছে তাদের জন্য এম্পাওরমেন্টের টোপ, যারা অলরেডি ইন্ডাস্ট্রিতে আছে তাদের জন্য ‘স্বাবলম্বী নারী’ হবার লোভ আর যারা রিটায়ার করেছে তাদের মুখ করে দেয়া হয়েছে বন্ধ।

ব্রোকেন ফ্যামিলি আর নরকে পরিণত হওয়া লাভ লাইফ- কোনটার জন্য নারীবাদ দায়ী নয়? এই দুটোই একেবারে মৌলিক কারণ যা কাউকে পর্ণের দর্শক বানায়। নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের বারোটা বাজিয়ে নারীকে বসানো হয়েছে ক্যামেরার সামনে আর পুরুষকে স্ক্রীনের। আর এভাবেই নারীবাদ ব্যবহার করে একই ঘর থেকে পর্নের ডিমান্ড আর সাপ্লাই দুটোই তৈরি করে নেয়া হয়েছে।
(ঠিক যেমনটা এই লেখার শুরুতে বলেছিলাম)

প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
পর্ন নিয়ে বাংলাদেশী নারীবাদিদের অবস্থান আন্তর্জাতিক নারীবাদের চেয়ে মোটেও ভিন্ন নয়।
পর্ন দেখা নিয়ে বাংলাদেশের একটি নারীবাদি ব্লগে একটা লেখা ছিলো এরকম, যেসব নারীরা পর্ন দেখেন না, চটি পড়েন না তারা সতী সাজার চেষ্টা করছেন, আর সতী মানে ভন্ড। (রেফারেন্স- ২৪)

একইসাথে, গত কয়েক বছর আগে, একজন নারীর ক্ষমতায়ন প্রকাশের জন্য একটি ভাইরাল হওয়া পর্ন ভিডিওকে বেছে নেন। তার লেখায় তিনি দাবী করেন, ওই ভিডিওতে মেয়েটার নির্দিষ্ট অ্যাক্ট নাকি নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত করেছে।
হিপোক্রেসি এখুন, শালীন পোশাক নিয়ে একলাইনের আলোচনাও এদের ব্যাক্তিস্বাধীনতায় আঘাত করে। অথচ সে তারাই অন্য আরেকজনের একান্ত ব্যাক্তিগত-বেডরুমের ব্যাপার নিয়ে চুড়ান্ত মাত্রার নির্লজ্জ্ব অ্যানালাইসিস প্রকাশ্যেই করলেন। (রেফারেন্স-২২, ২৩)
সোশাল মিডিয়ায় এই ক্ষমতায়ন দেখাতে পর্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে মাতামাতি, ট্রোল-ফান এসব যে মেয়েরা করছে তারা “পুরুষের চেয়ে কম নই” দেখাতেই করছে। বাংলাদেশে নারীর চুড়ান্ত স্বাধীনতা বলতে যা বোঝানো হয়, সেই ‘দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়’ এর অ্যাপ্লিকেশন ফর্মের সাথে পর্ন স্টুডিওর রিক্রুটমেন্ট ফর্মের কোন পার্থক্য আছে কি?
নারীর যেকোনো পেশা বেছে নেবার স্বাধীনতার নামে সবচেয়ে বেশী অর্জিত হয়েছে বেশ্যাবৃত্তির স্বাধীনতা, পাপিয়াকান্ডের পর তা পুরোপুরি স্পষ্ট। পর্নে অভিনয় করা একটি স্বাধীন পেশা এবং সম্ভব হলে আমাদের মেয়েদের তা করাও উচিত-এটা বাংলাদেশী নারীবাদিরা বহুবার স্পষ্ট করেছেন। আর তাই দূর বা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মেয়েদেরকেও হয়তো পুর্ন স্বাধীন হতে পর্ন-স্টুডিওতে ঢূকতে দেখবো।

সময় বলবে।

কিছু কথাঃ
১। লেখাটিতে ইচ্ছে থাকলেও অনেক রেফারেন্স যোগ করা যায় নি। কোনো পর্ন অভিনেত্রীর নাম বা কোনো পর্ন সাইট এক্সপোজ হয়ে যায় এরকম কোনো রেফারেন্স রাখা হয় নি, রেফারেল পাপ কামানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবে কারো প্রচুর দরকার হলে আমাকে বলতে পারেন।
২। পর্ন নিয়ে লেখা অথচ একজন পর্ন অভিনেত্রীরও নাম উল্লেখ না করে – ব্যপারটা কঠিন। আর টপিকটা এত বিস্তর যে চাইলে স্বতন্ত্র গবেষণা সম্ভব। কারো এই টপিকে বাংলা বা ইংরেজী গবেষণাপত্রের ব্যপারে জানা থাকলে বলতে পারেন।
এই আর্টিকেলটিতে ছয় হাজার শব্দ রয়েছে। পড়েছেন, অনেক ধন্যবাদ। মাআ’সসালাম।

রেফারেন্সঃ
১। https://www.psychologytoday.com/us/blog/love-and-sex-in-the-digital-age/201607/why-the-reasons-someone-looks-porn-matter
২। https://www.youtube.com/watch?v=hzj2nX20FoE
৩। https://www.theguardian.com/lifeandstyle/2020/jan/14/cam-girl-webcamming-porn-industry
৪। https://theconversation .com/webcamming-the-sex-work-revolution-that-no-one-is-willing-to-talk-about-69834
৫। https://otrmodels.co.uk/why-camming-is-a-feminist-revolution/
৬। https://marginalrevolution .com/marginalrevolution/2018/12/cam-girl-economics.html
৭। https://nypost.com/2020/03/14/business-booming-for-cam-girls-amid-coronavirus-outbreak/
৮। https://www.independent.co.uk/life-style/gadgets-and-tech/features/webcamming-the-sex-work-revolution-that-no-one-is-willing-to-talk-about-a7485176.html
৯। https://fightthenewdrug.org/surprising-facts-about-human-trafficking-in-the-u-s/
১০। https://fightthenewdrug.org/how-can-you-identify-sex-trafficking-victims-in-porn/
১১। https://fightthenewdrug.org/stats-you-need-to-know-about-child-sex-trafficking/
১২। https://fightthenewdrug.org/the-traffickers-victims-and-buyers-heres-how-sex-trafficking-happens/
১৩। https://www.catalystministries .net/blog/2017/11/27/an-inseparable-tie-pornography-and-sex-trafficking
১৪। https://www.youtube.com/watch?v=pIxdnnxqK6o&feature=youtu.be
১৫। https://plato.stanford .edu/entries/feminist-sex-markets/#Porn
১৭। https://www.indierepublik .com/en/mainstream-porn-is-out-sex-positive-porn-is-in/?cn-reloaded=1
১৮। https://www.independent.co.uk/voices/feminism-liberal-womens-rights-fourth-wave-slut-walks-sex-misogyny-patriarchy-a8424536.html
১৯। https://www.nytimes.com/roomfordebate/2012/11/11/does-pornography-deserve-its-bad-rap/pornography-can-be-empowering-to-women-on-screen
২০। https://cargocollective .com/jeffjetton/Economics-of-Porn
২১। https://www.greenleft .org.au/content/feminist-perspective-pornography
২২। https://womenchapter.com/views/16310
২৩। https://womenchapter.com/views/22108
২৪। https://www.nari.news/post/moonmoon-soti-vomdo

Published by kmahbub168

I am the servant of Allah. And the followers of prophet Hazrat Muhammad(S:)

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started